মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম: মোবাইলে চ্যানেল তৈরি

বর্তমান সময়ে ঘরে বসে নিজের খালি সময়ে কাজ করে অনলাইনে আনলিমিটেড টাকা ইনকাম করার সেরা উপায় গুলির মধ্যে একটি হলো, “ইউটিউব”। আর যদি আপনিও নিজের মোবাইল দিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে সেখান থেকে নিয়মিত ইনকাম করতে চান, তাহলে সেটা অবশই সম্ভব।

তবে প্রথমেই এর জন্যে আপনাকে নিজে জন্য একটি YouTube channel বানিয়ে নিতে হবে। চিন্তা করতে হবেনা, নিচে আমরা মোবাইলে কিভাবেই উটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন, সেই বিষয়ে স্টেপ বাই স্টেপ বলে দিয়েছি। (How To Create a YouTube Channel Using Mobile).

অবশই পড়ুন: মোবাইল দিয়ে সিভি কিভাবে তৈরি করতে হয়?

মোবাইল দিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কি কি লাগে?

মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম জানার আগেই, আপনাকে এইটা জানতে হবে যে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে কি কি লাগে।

এমনিতে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে বিশেষ কিছুই লাগে না। আপনার কাছে একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকলেই বিনামূল্যে ইউটিউব চ্যানেল খোলা যায়।

চলুন, দেখা যাক ইউটিউব এর মধ্যে নতুন চ্যানেল খুলতে কি কি লাগবে।

  • মোবাইল/ল্যাপটপ/ইন্টারনেট কানেকশন।
  • আপনার একটা জিমেইল আইডি ও তার পাসওয়ার্ড।
  • ইউটিউব অ্যাপ্লিকেশন বা ইউটিউবের ওয়েবসাইট। 
  • কি বিষয়ে চ্যানেল বানাবেন সেটা নির্দিষ্ট করা।
  • ভিডিও রেকর্ড করার জন্য একটি ক্যামেরা বা স্মার্টফোন থাকা।
  • তৈরি করা ভিডিও গুলি এডিট করার জন্য একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ ব্যবহার করা।

এমনিতে, একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য উপরে বলে দেওয়া পয়েন্ট গুলির মধ্যে থেকে প্রথমের ৩টি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, নিচের পয়েন্ট গুলিও অনেক জরুরি যদি আপনি নতু করে একটি চ্যানেল তৈরি করতে চাইছেন।

অবশই পড়ুন: মোবাইলে ছবির পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করার উপায়

জেনেনিন এই জরুরি ইউটিউব চ্যানেল সেটিং গুলির বিষয়ে:

নিজের মোবাইল দিয়ে কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবো, এই বিষয়ে জানার আগে চলুন প্রথমেই কিছু জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ইউটিউব চ্যানেল সেটিং গুলির বিষয়ে আমরা জেনেনেই।

ইউটিউব চ্যানেল ফ্রিতে খোলা গেলেও, নিজের চ্যানেল থেকে রোজগার করার জন্যে এবং সম্পূর্ণ সঠিক ভাবে চ্যানেলটি পরিচালনা করার জন্য আপনাকে বেশ কয়েকটি চ্যানেল সেটিং কাস্টোমাইজ করতে হবে। 

আপনি আপনার YouTube mobile app-এর মধ্যে থেকে YouTube Studio-তে গিয়ে নিচে বলে দেওয়া প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ সেটিংগুলো অ্যাডজাস্ট করতে পারেন। 

  • নিজের চ্যানেলের অফিসিয়াল প্রোফাইল পিকচার/লোগো দেওয়া।
  • চ্যানেল ডেসক্রিপশন ও চ্যানেল আর্ট সেট করা।
  • সঠিকভাবে ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফিকেশন করা।
  • ইউটিউব মনিটাইজেশান রুলস অনুসারে কাজ করা।
  • ‘Country of residence’ থেকে নিজের কান্ট্রি/রিজিয়ন বাছা।
  • চ্যানেলের সাথে মেলে এমন সব ‘Keyword’ দেওয়া।
  • চ্যানেলের টার্গেট ‘Audience’ ঠিক করা।
  • ভিডিওগুলোতে ‘Automatic Captions’-এর সাহায্যে ক্যাপশন বানানো।
  • ‘Redirect URL’-এর মাধ্যমে অন্যান্য চ্যানেলে দর্শকদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
  • ‘Channel Visibility’ সেটিং থেকে চ্যানেল show বা hide করা।
  • ‘Other Settings’ থেকে যেকোনো কনটেন্ট YouTube থেকে পুরোপুরিভাবে ডিলিট করা।

নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কত টাকা লাগবে?

একটা ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্যে কোনোরকমের কোনো টাকা লাগে না। একটা Google বা Gmail account থাকলেই সম্পূর্ণ ফ্রিতে নিজের জন্য একটা চ্যানেল তৈরি করা সম্ভব।

তবে, এই চ্যানেলগুলোতে ভিডিও কনটেন্ট দেওয়ার জন্যে আপনাকে মিনিমাম টাকা খরচ করতেই হবে।

যেমন ধরুন, ভালো কোয়ালিটির অডিও/ভিডিও কনটেন্ট বানানোর জন্যে হাই-কোয়ালিটি ক্যামেরা, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, মাইক্রোফোন, লাইটিং, ষ্টুডিও-স্টাইল সেটআপ এবং ভালো এডিটিং সফটওয়্যার কিনতেই লাগে।

তাছাড়াও, আপনার কনটেন্টের উপরও খরচের পরিমাণ খানিকটা নির্ভর করে; যেমন- রিঅ্যাকশন ভিডিও, টিউটোরিয়াল এই ধরণের কনটেন্টে খরচা কিছুটা কম।

অন্যদিকে, রান্না, মেকআপ টিউটোরিয়াল বা ট্রাভেলিং ভিডিওর খরচ সেইদিক থেকে অনেকটাই বেশি হয়।

এছাড়াও, আপনার কনটেন্টের জন্যে যদি প্রফেশনাল এডিটর, ফটোগ্রাফার বা প্রোডাকশন টীম অথবা স্টুডিও-এর দরকার হয়, তাহলে সেখানকার খরচাটা আরও অনেকটাই বেশি হবে।

তবে, যদি আপনি সম্পূর্ণ ফ্রি রিসোর্সেস এবং এডিটিং সফটওয়্যার গুলি ব্যবহার করছেন এবং নিজে ভিডিও বানিয়ে সেগুলিকে নিজেই এডিট করে আপলোড দিচ্ছেন, তাহলে কেবল একটি ভালো ক্যামেরা থাকলেই একেবারে ফ্রেটেই ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে পারবেন।

মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম কি?

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন মোবাইলে
Create YouTube channel using mobile.

আমাদের সবাইকেই, কম-বেশি ইউটিউবে ভিডিও দেখা, সাবস্ক্রাইব, কমেন্ট বা লাইক করার জন্যে একটি Google Account থেকে ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে সাইন ইন করতেই হয়।

তবে, একটা নির্দিষ্ট চ্যানেল না থাকলে ইউটিউবে আপনার কোনো পাব্লিক প্রেসেন্স বা অস্তিত্বই থাকে না।

আর, আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট থাকলেও, আলাদাভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুললে তবেই আপনি নিজের ভিডিও আপলোড করতে, প্লেইলিস্ট বানাতে কিংবা কমেন্ট করতে পারবেন।

ইউটিউব ওয়েবসাইট, ইউটিউব মোবাইল সাইট বা ইউটিউবের মোবাইল অ্যাপ, পছন্দমতো যেকোনো প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি একটি নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন।

তবে মনে রাখবেন, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা, মোবাইলে কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবো সেই বিষয়ে আলোচনা করছি। আর তাই, ইউটিউব মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সরাসরি চ্যানেল তৈরি করার ধাপ গুলি জানবো।

চলুন তাহলে জেনে নিই,

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন মোবাইলে?

ধাপে-ধাপে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম/উপায়:

স্টেপ-১: Google Account রেডি রাখা:

ইউটিউবে চ্যানেল বানাতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে।

আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট থাকলে, সেই জিমেইল ID ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই ইউটিউবে চ্যানেল তৈরী করা সম্ভব।

যদি, আপনার একটি জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্ট না থাকে, তাহলে সবার আগে সেটা তৈরী করে নিন।

স্টেপ-২: মোবাইল থেকে YouTube অ্যাপ ওপেন করা: 

এরপর আপনাকে আপনার মোবাইলে প্রি-ইনস্টল্ড YouTube app-টি ওপেন করতে হবে।

এটা ওপেন হলে, প্রথমে আপনাকে জিমেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে, আপনার প্রোফাইল খুলে নিতে হবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে YouTube app-এর মধ্যে আগের থেকেই গুগল একাউন্ট দিয়ে লগইন করা থাকে।

স্টেপ-৩: নিজের প্রোফাইলের ছবিতে ক্লিক করা: 

মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম

প্রোফাইল খুলে যাওয়ার পর, স্ক্রিনের একদম ডানদিকের নিচে থাকা গোল ‘You’ অপশনটিতে ক্লিক করুন।

Note: এবার অনেক সময় এই প্রোফাইল আইকন উপরে হাতের দান দিকেও চলে আসতে পারে।

সেক্ষেত্রে, নিজের প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করে “Your channel” এর অপশনে click করতে হবে।

Your channel-এর মধ্যে click করার পর আপনারা Create channel-এর অপসন দেখবেন যেখানে click করার সাথে সাথে আপনার নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরি হয়ে যাবে।

স্টেপ-৪: Create a channel-এ ক্লিক করা:

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবো

প্রোফাইল পেজ খুললে, এবার আপনার জিমেইল আইডির নামের নিচে থাকা  ‘Create a channel’-এ ক্লিক করুন।

স্টেপ-৫: নিজের ডিটেলস অ্যাড করা:

ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম

‘How you’ll appear’ পেজটি ওপেন হলে ‘Picture’, ‘Name’ ও ‘Handle’ সেক্শনগুলো নিজের ইচ্ছেমতো এডিট করুন।

তারপর, চাইলে পিকচার সেকশনটির ডানদিকে থাকা গোল ছবিটিতে ক্লিক করুন।

এরপর নিজের সিলেক্ট করা ছবিটি প্রয়োজনমতো ক্রপ ও রোটেট করে ‘save as profile picture’ বাটনটিতে ক্লিক করলে, আপনার প্রোফাইলের ছবি বদলে যাবে।

সবশেষে, ‘How you’ll appear’ পেজে থাকা, ‘CREATE CHANNEL’-এ ক্লিক করলেই, একদম ফ্রিতে ও সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার ইউটিউব চ্যানেল খুলে যাবে।

YouTube Channel Has Been Created

ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করার পর আপনার চ্যানেল পেজে “Create” এর একটি অপসন দেখতে পাবেন।

এই “Create” এর অপশনে click করার পর আপনারা সরাসরি নিজের চ্যানেলের জন্য create a short video, upload a video, Go live, create a post, প্রত্যেকটি অপসন পেয়ে যাবেন।

নিজের চ্যানেলে সরাসরি ভিডিও আপলোড করার জন্য, upload a video অপশনে click করলেই হবে।

FAQ: কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন মোবাইলে:

প্রশ্ন: ইউটিউব চ্যানেল থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করবো?

চ্যানেলে ভিউয়ারশিপের পাশাপাশি, YouTube Partner Program/Google AdSense, শপিং অ্যাফিলিয়েটেড প্রোগ্রাম, ইউটিউব প্রিমিয়াম, চ্যানেলের মেম্বারশিপ, সুপার চ্যাট ও সুপার স্টিকার এবং সুপার থ্যাংকস-এর সাহায্যে সাবস্ক্রাইবারদের থেকে সরাসরিও টাকা আয় করতে পারবেন।

প্রশ্ন: কতজন সাবস্ক্রাইবার হলে ইউটিউব থেকে পেমেন্ট পাওয়া যাবে?

২০২৩ সালের মনেটাইজেশান রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী, কমপক্ষে ১০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকলে তবেই ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের জন্য এপ্লাই করে পেমেন্ট পাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: কিভাবে ইউটিউবে সাবস্ক্রাইবার বাড়াবো?

ভাইরাল কন্টেন্টে ভিডিও বানিয়ে, আকর্ষণীয় থাম্বনেইল, টার্গেট অডিয়েন্সের জন্যে ভালোভাবে রিসার্চ করে কনটেন্ট বানিয়ে, প্লেলিস্ট তৈরী করে এবং অডিয়েন্সদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো যায়।

প্রশ্ন: ইউটিউব থেকে পেমেন্ট পেতে আমার কতটা ভিউ লাগবে?

YouTube থেকে পেমেন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে কত ভিউস লাগবে সেটা সরাসরি বলা যাবেনা। কেননা, আলাদা আলাদা কনটেন্ট এর প্রকার, ট্রাফিক, ট্রাফিক কান্ট্রি, ইত্যাদির উপরে নির্ভর করে অনেক কম বা অনেক বেশি ভিউতে ইনকাম করা যায়। তবে পেমেন্ট পেতে আপনার কোনো মিনিমাম ভিউ এর প্রয়োন হবেনা। তবে, চ্যানেলটি YouTube Partner Program-এর জন্য এপ্লাই করার জন্য, ১ বছরে মিনিমাম ৪০০০ ঘন্টার ওয়াচ টাইম এবং ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকা দরকার।

উপসংহার:

তাহলে বন্ধুরা, নিজের মোবাইল দিয়ে কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবো? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক স্পষ্ট ভাবে পেয়ে গিয়েছেন বলে আশা করছি। এমনিতে একটি কম্পিউটারের সাহায্যেও ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম একই ভাবেই সোজা।

এছাড়া, মোবাইলের তুলনায় একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দ্বারা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করাটা আমার হিসেবে অধিক লাভজক ও সুবিধাজনক। কেননা এক্ষেত্রে আপনি নিজের চ্যানেলটিকে অনেক ভালো করে এডিট, কাস্টমাইজ এবং ডিজাইন করতে পারবেন।

কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের প্রতিটি সেটিংস এক্সেস করার সুবিধা পাবেন। তাহলে, কিভাবে মোবাইলে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন, বিষয়টি নিয়ে লিখা আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে, আর্টিকেলটি শেয়ার অবশই করবেন।

অবশই পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top