বর্তমান সময়ে ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে ইনফ্লুয়েন্সারদের রাজত্বই সবথেকে বেশি। এই ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রোফাইলগুলো যেমন প্রোফেশনাল হয়ে থাকে; ঠিক তেমনই সমানভাবে তাদের সমস্ত ছবিগুলোও আমাদের চোখ আকর্ষণ করে।
এখনকার প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরাই সুন্দর ছবি তুলে নানা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আপলোড করে নিজেদেরকে পপুলার ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অথচ, আমাদের প্রায় সকলের এন্ড্রয়েড মোবাইলগুলোতেই সেরকম ভালো কোয়ালিটির ক্যামেরা থাকে না। একটি অ্যাভারেজ ছবি সুন্দর করার উপায় কি সেটা নিয়ে অনেকেই ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে থাকেন।
অবশই পড়ুন: মোবাইল পরিষ্কার করার সফটওয়্যার/অ্যাপস
তাই, আমরা আজকে আপনাদের এমন সব ইউসার-ফ্রেন্ডলি ছবি সুন্দর করার সফটওয়্যার গুলোর সন্ধান দেবো, যেগুলোর সাহায্যে আপনি সেকেন্ডের মধ্যে একদম প্রোফেশনালভাবে নিজের ছবি এডিট করতে পারবেন। চলুন, তাহলে আমরা জেনে নিই, সেরা ৯টি ফটো এডিটিং ও বিউটিফায়িং অ্যাপ্লিকেশনগুলো সম্পর্কে।
মোবাইলের ৯টি ছবি সুন্দর করার সফটওয়্যার: ফ্রি ডাউনলোড

নিচে বলে দেওয়া মোবাইলে ছবি সুন্দর করার এই প্রত্যেকটি সফটওয়্যার আপনারা ফ্রীতে ডাউনলোড করে নিজের ব্যবহার করতে পারবেন। মোবাইল দিয়েই সম্পূর্ণ প্রফেশনাল ভাবে ছবি সুন্দর করার উপায় হিসেবে এই অ্যাপস গুলো আপনার অনেক কাজে আসবে।
রিলেটেড: মোবাইলে ছবি এডিট করার প্রফেশনাল সফটওয়্যার
অ্যাপস গুলো ফ্রীতে ব্যবহার করা যাবে যদিও এদের একটি প্রিমিয়াম প্ল্যান অবশই থাকতে পারে। তবে premium plan নেওয়া বা নানেওয়া সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে।
১. Photo Editor – Collage Maker:
রেটিং: 4.8/5
ডাউনলোড: 5Cr+
প্রচুর কাস্টোমাইজেবেল বিউটি ফিল্টারের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম/হোয়াটস্যাপ/ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সাইটে দ্রুত নিজের ছবি এডিট করে আপলোড করার সেরা অ্যাপ হল এই Photo Editor। প্রায় ৩০০+ ফ্রি ও প্রিমিয়াম কোলাজ লেআউট থেকে শুরু করে, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ ও ব্লার করার সহজ ঠিকানা হল এই ফটো বিউটিফাইং সফটওয়্যারটি। এমনকি, এটি ব্যবহার করে আপনি নিজস্ব মিমও বানাতে পারবেন।
ফিচার:
✔ ইনস্টাগ্রাম–ওয়ার্দী ফ্রি বিউটি ফিল্টার।
✔ ফ্রিস্টাইল ছবি ক্রপ ও এডিটের অপশন।
✔ হাই–রেসল্যুশনে ছবি সেভ/শেয়ার করা যায়।
সুবিধা:
- এক ক্লিকে ছবির ব্যাকগ্রান্ড রিমুভ হয়।
- একসাথে ২০টা ছবির কোলাজ বানানো যায়।
- ছবিতে সহজেই টেক্সট/স্টিকার/ইমোজি দেওয়া ও এডিট করা যায়।
অসুবিধা:
- সমস্ত ফিচার ফ্রি নয়।
- ইন–অ্যাপ অ্যাড রয়েছে।
২. Collage Maker | Photo Editor:
রেটিং: 4.7/5
ডাউনলোড: 10Cr+
Collage Maker বিউটিফায়িং অ্যাপ্লিকেশনটি এক ক্লিকেই আপনার সেল্ফিগুলোকে সুন্দর করে তোলে। এমনকি, এর দুর্দান্ত বিউটি ফিল্টারগুলো আপনার ছবির কোয়ালিটি একটুও নষ্ট করে না। বরং, এর ইউনিক ফিল্টার ও ফ্রি স্ন্যাপচ্যাটের মতো স্টিকার ব্যবহার করে, আপনি আপনার ছবিগুলোকে সহজেই আকর্ষণীয় করতে পারেন। এছাড়াও, এখানে AI cutout নামের অটোম্যাটিক ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার, কোলাজ মেকার ও আরো নানান স্মার্ট ফিচার আছে।
ফিচার:
✔ প্রফেশনাল ফটো এডিটিং ও ফিল্টার সেটিংস।
✔ ১০০+ সোশ্যাল মিডিয়া স্টোরি টেমপ্লেট আছে।
✔ অসংখ্য স্টিকার/ফন্ট/ব্যাকগ্রাউন্ড অপশন রয়েছে।
সুবিধা:
- ১০০+ ছবি কোলাজ করা যায়।
- সাইড–বাই–সাইড ফিচারে বিফোর/আফটার ছবি বানানো যায়।
- ইনস্টাগ্রামের মতো ব্লার–ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে স্কোয়ার ফটো তৈরীর সুবিধা।
অসুবিধা:
- ইন–অ্যাপ অ্যাড ও পার্চেজ আছে।
৩. Fotogenic: Photo Editor:
রেটিং: 4.7/5
ডাউনলোড: 50L+
সোশ্যাল মিডিয়াতে সেলেব্রিটি ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো ফটো এডিট করার সেরা উপায় হল এই Fotogenic অ্যাপ্লিকেশনটি। এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের Beauty ফিচারটিতে আপনি স্মুথ, ডিটেইল, মেকআপ, ওহাইটেন, বডি বিল্ডিং–এর মতো অপশনগুলো ব্যবহার করে নিজের মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশকে সুন্দরভাবে এডিট করতে পারবেন। এছাড়াও, এখানের কালার এডজাস্টমেন্ট ও বিভিন্ন ফটো এডিটিং টুলস আপনার ছবিতে একটা প্রফেশনাল ফিনিশ এনে দেবে।
ফিচার:
✔ বিভিন্ন গ্রাফিক লুক অ্যাড করা যায়।
✔ সেল্ফি পারফেক্ট করার নানান ফিচার আছে।
✔ ফেক ট্যাটু/বডি বিল্ডিং/ক্লোনিং ফিচার রয়েছে।
সুবিধা:
- ক্রিয়েটিভ ছবি এডিট করার সুবিধা।
- ক্রপ না করেই স্কোয়ার ফটো করা যায়।
- এডিট করে নিজেকে রোগ/মোটা/লম্বা করা সম্ভব।
অসুবিধা:
- প্রিমিয়াম ফিচারগুলো বেশ দামি।
৪. Makeup Camera- Beauty Editor:
রেটিং: 4.6/5
ডাউনলোড: 1Cr+
ছবি তোলার আগে মেকাপ করার সময় পাননি? কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের সেরা ছবি আপলোড দিতে চান? তাহলে, Makeup Camera সফটওয়্যারটির মেকওভার ও বিউটি ফিচারের সাহায্যে ইচ্ছেমতো লিপস্টিক শেড, আই শ্যাডো ও আরও নানান টুলের সাহায্যে নিজের ছবিকে সুন্দর করে তুলুন। এই অ্যাপের সেল্ফি ফিল্টার আপনার ছবিকে নিমেষেই আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। এছাড়াও, এটি আপনার ছবি থেকে রিঙ্কেল, পিম্পল সরিয়ে দিয়ে আপনার স্কিনটোনকে একদম সুন্দর ও মসৃণ করে দেয়।
ফিচার:
✔ ১০০+ মোশন ফানি ফেস স্টিকার।
✔ কমপ্লিট ভার্চুয়াল মেকআপ ফিচার।
✔ ফেস স্লিমিং, স্কিনটোন এডিটিং ফিচার আছে।
সুবিধা:
- একাধিক বিউটি ফিল্টার।
- ট্রেন্ডি হেয়ারস্টাইলের সুবিধা।
- মেকআপ ছাড়াই ফুল মেকআপ লুক।
অসুবিধা:
- প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখায়।
৫. Beauty Makeup Photo Editor:
রেটিং: 4.5/5
ডাউনলোড: 10L+
ঝকঝকে সাদা মিলিয়ন ডলারের হাসি যেকোনো মানুষেরই নজর কাড়ে। আর, Beauty Makeup Photo Editor–এর white teeth ফিচারের সাহায্যে সেই হাসি পাওয়া একদমই সহজ। এই ছবি সুন্দর করার মোবাইল সফটওয়্যারটির আই/লিপ্স/ফেস মেকআপ, হেয়ারস্টাইল চেঞ্জার এবং আরও নানান প্রফেশনাল ফিল্টারগুলো আপনার ছবিগুলোকে একেবারেই পিকচার পারফেক্ট বানিয়ে দেয়।
ফিচার:
✔ অটো অ্যাকনে রিমুভার ফিচার।
✔ আই/ফেস/লিপ মেকওভার ফিচার।
✔ বিভিন্ন ফ্যাশনেবল একসেসোরিস ফিচার।
সুবিধা:
- আইব্রো এডিটর ও রিমুভার টুলস।
- রিয়েল–টাইম কন্ট্যুর ও হাইলাইটের সুবিধা।
- ভার্চুয়ালি চোখের মণির রং পাল্টানোর সুবিধা।
অসুবিধা:
- প্রচুর বিজ্ঞাপন দেয়।
- অনেক ফিচার কিনতে হয়।
৬. Pretty Makeup- Beauty Camera:
রেটিং: 4.4/5
ডাউনলোড: 5Cr+
যদি মেকআপ করা আপনার সম্পূর্ণ অপছন্দের বিষয় হয়, আর যদি একবারও ফটোতে নিজেকে মেকআপ লুকে দেখতে চান, তাহলে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারেন। এর ভার্চুয়াল মেকওভার ফিচারের সাহায্যে আপনি নিজের খুশিমতো চোখের, মুখের ও ঠোঁটের মেকআপ সেরে নিতে পারেন।
এমনকি, এর স্মার্ট অটো রিকগনিশন ফিচারটি আপনার ছবিতে একদম পার্ফেক্টভাবে মেকাপ বসিয়ে দিতে পারে। এই অ্যান্ড্রয়েড মেকআপ সফটওয়্যারের অন্যতম সেরা ফিচার হল এর হেয়ারস্টাইল ও কালার চেঞ্জ করার ফিচারটি।
ফিচার:
✔ ১০০+ ফানি স্টিকার।
✔ ৩০+ মেকআপ থিম।
✔ ২০০+ হেয়ারস্টাইল ও কালার।
সুবিধা:
- অনেকগুলো মোশন স্টিকার আছে।
- ফলস আইলিড ও আই কালার অ্যাডের সুবিধা।
- ভার্চুয়াল ফ্যাশন আইওয়ার/হ্যাট/নেকলেস/ইয়াররিং অ্যাডের ফিচার।
অসুবিধা:
- ফিচার আনলকের জন্যে অ্যাড দেখতে হয়।
৭. Photo Editor, Filters- Lumii:
রেটিং: 4.4/5
ডাউনলোড: 5Cr+
বিউটি ও মেকআপের বাইরে গিয়ে একটু আর্টিস্টিক উপায়ে ছবি সুন্দর করে তোলার জন্যে Lumii হল একটা জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন। এই ফটো এডিটিং সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি সহজেই ডাবল এক্সপোজার, লাইট লিক ও গ্লিচের মতো ফটো এফেক্টগুলো ছবিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফ্রি অ্যাপটিতে দুর্দান্ত সব ধরণের ফটো ফিল্টার, ব্যাকগ্রাউন্ড ইরেজার এবং বেসিক ফটো এডিটিং টুলসও আছে।
ফিচার:
✔ উন্নত কালার কারেকশন ফিচার।
✔ ১০০+ এফেক্ট ও স্টাইলিশ ফিল্টার।
✔ ডাবল এক্সপোজার/প্রো লেভেল কার্ভস/টেক্সট/স্টিকার।
সুবিধা:
- সহজে ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ/চেঞ্জের সুবিধা।
- ইনস্টাগ্রামের ছবির মতো ফটো এডিটের সুবিধা।
- ফ্রি HSL (হিউ/স্যাচুরেশন/লুমিন্যান্স) কালার মোড।
অসুবিধা:
- সব ফিচারগুলো ফ্রি নয়।
৮. AI Enhancer, AI Photo Enhancer:
রেটিং: 4.4/5
ডাউনলোড: 1Cr+
AI Enhancer–এর AI টেকনোলজির সাহায্যে আপনার যেকোনো ১০–২০ বছরের পুরানো ছবিকেও একদম সুন্দর ও নতুন করে তুলতে পারেন। এই ছবি সুন্দর করার সফ্টওয়ারটি আপনার ঝাপসা, অস্পষ্ট ছবিকেও চকচকে, রঙিন ও HD কোয়ালিটির করে দেয়। এই অ্যাপ্লিকেশনটির সাহায্যে আপনি ছবির রেসল্যুশন ২০০–৮০০% পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। এটি আপনার পুরানো অ্যালবামের নষ্ট হয়ে আসা ছবিগুলোকেও রিস্টোর করতে সক্ষম।
ফিচার:
✔ পুরোনো ছবি রিস্টোরেশন।
✔ ওয়ান–ক্লিক ফটো এনহ্যান্সমেন্ট।
✔ HD পোট্রেট মোড ও ফেস রিকগনিশন।
সুবিধা:
- স্মার্ট ফিল্টারের সুবিধা।
- ছবির কোয়ালিটি বাড়িয়ে তোলে।
- এক ক্লিকেই সাদা–কালো ছবি রঙিন করে।
অসুবিধা:
- ফিচার সীমিত ও লম্বা অ্যাড দেখতে হয়।
৯. YouCam Perfect- Photo Editor:
রেটিং: 4.3/5
ডাউনলোড: 10Cr+
YouCam Perfect হল এমন একটি অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার, যেটি একটি ফটো এডিটরের পাশাপাশি ক্যামেরা হিসেবেও কাজ করে। এটির ক্যামেরা ব্যবহার করে, আপনি বিউটি ফিল্টার অ্যাড করে মনমতো সেল্ফি বা ছবি তুলতে পারবেন। এর এডিটিং টুলসের মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন কোলাজ, ফেস টাচআপ, ফটো এফেক্টস, স্টিকারস, ফন্টস ও আরও নানান দরকারি ফাঙ্কশন।
ফিচার:
✔ ৩০০+ স্টিকার ও টেক্সট।
✔ প্রচুর ফ্রেম ও কোলাজ আছে।
✔ এক ক্লিকে ছবি থেকে অবজেক্ট রিমুভ করে।
সুবিধা:
- অবজেক্ট হাইলাইট বা ব্লার করা যায়।
- ব্যাকগ্রাউন্ড ও অবজেক্ট সরানোর টুলস আছে।
- অ্যাপ থেকে সরাসরি ফিল্টার সমেত ছবি তোলার সুবিধা।
অসুবিধা:
- ফ্রি ভার্সনে ছবিতে ওয়াটারমার্ক আসে।
শেষ কথা:
নিজেদের সুন্দর ছবি তুলতে আমরা সবাই ভালোবাসি। তাই যদি আপনিও নিজের মোবাইল দিয়ে ছবি সুন্দর করার উপায় খুঁজছেন তাহলে এর উত্তর হলো সেরা ফটো এডিটিং অ্যাপস গুলো ব্যবহার করে যেকোনো ছবি সুন্দর করে নিতে পারবেন।
আমাদের আজকের লিস্টের যেকটা এন্ড্রয়েড মোবাইলে ছবি সুন্দর করার সফটওয়্যার গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, সেগুলো সবকটিই Google Play Store থেকে ফ্রীতে ডাউনলোড করা সম্ভব।
তাই, নিশ্চিন্তে সেলফি তুলুন, এডিট করুন এবং নিজের স্টাইলিশ ফটো দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে রাজ করুন। শেষে, আমাদের আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়াতে অবশই শেয়ার করবেন।
অবশই পড়ুন: দুই ছবি একসাথে করার সেরা সফটওয়্যার